মুভি: দি অ্যাডভেঞ্চারস অফ টিনটিন (The Adventures Of Tintin)
ধরণ: Animation | Action | Adventure | Family | Mystery
অভিনয়ে: Jamie Bell, Andy Serkis and Daniel Craig
IMDb রেটিং: ৭.৫
টিনটিন…! ছেলেবেলায় যে নামটা শুনলেই ওই অ্যাডভেঞ্চার কমিক পড়ার লোভে আমার চোখ দুটো চকচক করে উঠত। আমার প্রথম পড়া টিনটিনের বইটি ছিল “চাঁদে টিনটিন” যার মাধ্যমে আমি প্রথম পাঠেই টিনটিনের ভক্ত হই। আর আমার মালিকানাধীন প্রথম বইটি হল “মমির অভিশাপ”; আব্বু ঢাকা থেকে এনে দিয়েছিল, বরিশালে থাকতাম তখন; ক্লাস টু-তে পড়তাম। তখন আব্বুর ঢাকায় যাওয়া মানেই আমার একগাদা পুরান তিন গোয়েন্দা-রহস্য পত্রিকা পাওয়া। আব্বু ফিরেছিল রাত দুটোর দিকে, আর আমি বিছানা ছেড়ে চুপিচুপি তার ট্রাভেল ব্যাগ ঘেঁটে “মমির অভিশাপ” আবিষ্কার করে যথাস্থানে রেখে দিই। পরদিন ফজরের আজানের পর আমি “মমির অভিশাপ” হাতে খোলা জানালার পাশে টুলের উপর বসে যাই, ঠান্ডার মধ্যে হাফ শার্ট এবং হাফ প্যান্ট পড়ে!
সেই টিনটিনের ভিজ্যুয়াল স্বাদ! আহ! তর কি সয়?
“জেমস বন্ড” খ্যাত ড্যানিয়েল ক্রেগ এর কুশলে, স্টিভেন স্পিলবার্গ নির্মিত অ্যানিমেশন মুভি “দ্যা অ্যাডভেঞ্চার্স অব টিনটিন”এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার ২১ ডিসেম্বর হওয়ার কথা, তবে টিনটিনের জন্মস্থান বেলজিয়ামে মুভিটি মুক্তি পেয়েছিল অক্টোবরে। ওখান থেকেই মুভিটার ক্যামরিপ লিকড হয়ে যায় এবং ফলাফল আমি আরও অনেক টিনটিনভক্ত মুভিটা দেখে ফেলি। পারফরমেন্স ক্যাপচার থ্রিডি প্রযুক্তিতে তৈরী এই মুভিতে মোশন ক্যাপচার পদ্ধতিতে চিত্রধারণের সময় অভিনেতাদের নড়াচড়াগুলোকে ধারণ করা হয়েছে, এবং একই সাথে সেগুলোকে ডিজিটাল মডেলে রূপান্তরিত করে এনিমেশনে রূপ দেওয়া হয়েছে।
মুভিটা ভালই; অ্যাভারেজের চেয়ে অনেক বেশি মজা, আমার ব্যক্তিগত মতে। যথেষ্ট আনন্দদায়ক, বিনোদনদায়ক। বিশেষ করে টিনটিনের ছোট কুকুরটার কান্ডগুলো। দেখলেই মজা লাগে।
খোলাবাজার থেকে মাত্র আধা পাউন্ড দিয়ে ইউনিকর্ন নামের একটা জাহাজের মডেল কেনার পর টিনটিনকে বেশ মোটা দামে জাহাজটি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় শাখারিন, নিজেকে জাহাজের মডেল সংগ্রহকারী এবং ইউনিকর্নের আরেকটি মডেলের মালিক দাবী করে। টিনটিন রাজি হয় না। শাখারিন জাহাজটির জন্য এতই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, টিনটিনকে অপহরণ করে মরক্কোগামী পণ্যবাহী জাহাজ “কারাবুজান”এ তুলে আনে সে। বরাবরই টিনটিনের সঙ্গী হয় তার পোষা কুকুর স্নোয়ি। শাখারিনের কারসাজিতে কারাবুজানের কর্মচারীরা ওই জাহাজের মদ্যপ ক্যাপটেন হ্যাডকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। কিন্তু টিনটিন, স্নোয়ি আর ক্যাপ্টেন হ্যাডক জাহাজ থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং ঘটনাক্রমে তারা হাজির হয় মরক্কোর এক শেখ, বেন সালাদের দরবারে, যার কাছে ইউনিকর্নের আরেকটি মডেল রয়েছে। ইতিমধ্যে টিনটিনকে ক্যাপ্টেন হ্যাডক জানায়, তিন শ’ বছর আগে তার পূর্বপুরুষ স্যার ফ্রান্সিস হ্যাডকের জাহাজ ইউনিকর্ন ডুবতে বসে শাখারিনের জলদস্যু পূর্বপুরুষ রেড র্যাকহামের আক্রমণে। কিন্তু ফ্রান্সিস ধন-সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হন এবং তিনটি পৃথক কাগজে লুক্কায়িত গুপ্তধনের সুত্র লিখে যান, যেগুলো ওই তিনটি ইউনিকর্ন জাহাজের মডেলের ভেতর রয়েছে। মিলানের কোকিলকণ্ঠী গায়িকা বিয়াঙ্কা কাস্তাফিওরকে অপব্যবহার করে শত্রুপক্ষ তৃতীয় জাহাজের মডেলটি পেয়ে যায়। আনাড়ি গোয়েন্দা থম্পসন ভাতৃদ্বয়ের সাহায্যে টিনটিন, স্নোয়ি আর ক্যাপ্টেন হ্যাডক রুখবে শাখারিনকে, হ্যাডকের প্রাপ্য গুপ্তধন দখল করা থেকে।
আগে জানতাম, কাঁকড়া রহস্য, বোম্বেটে জাহাজ এবং লাল বোম্বেটের গুপ্তধন- এই তিনটি ক্রমিক বইএর কাহিনী মিলিয়ে মুভিটা বানানো হয়েছে। দেখার পর বুঝলাম, কনসেপ্টটা ঠিক আছে, কিন্তু কাহিনী এদিক ওদিক হয়েছে। শুরু হয়েছে বোম্বেটে জাহাজ দিয়ে, মাঝে এদিক ওদিক করে কাঁকড়া রহস্যের কিছু অংশ টেনে আনা হয়েছে আর শেষ করা হয়েছে বোম্বেটের গুপ্তধনের একদম শেষের অংশ দিয়ে। তবে রিমিক্স কাহিনীটাও খারাপ না বরং অনেক আনন্দদায়ক আর একটু ভিন্নস্বাদের।
চরিত্রগুলোর ব্যাপারে বলি এইবার। ভার্চুয়াল টিনটিনকে দেখলে চেনা যাবে, কিন্তু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে কমিকের পাতার টিনটিনের সাথে একটু অমিলও যেন রয়েছে। যেমন টিনটিনের চুলের রঙ অতটা ঘন নয় যতটা মুভিতে দেখানো হয়েছে, বরং বেশ হালকা, শরীরের রঙের সাথে মিলে যায় প্রায়। আবার মুখেও সেইরকম সদাপ্রাণবন্ত ভাবটা একটু কম। জনসন-রনসনও ততটা স্বাস্থ্যবান নয়। আর হ্যাঁ, মুভির আসল ভিলেন শাখারিন কিন্তু মূল কাহিনীতে ভিলেনই না।
তবে অ্যাকশনগুলো হয়েছে সেইরকম। যাকে বলে একদম ফাটাফাটি। কারাবুজান জাহাজ থেকে পালানো কিংবা স্যার ফ্রান্সিস হ্যাডকের সাথে লাল বোম্বেটের লড়াই দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রায় জীবন্তভাবে। তৃতীয় চিরকুট ছিনতাইয়ের চরম অ্যাকশনটা মূল কাহিনীতে নেই। ওটা রিমিক্স লেখক স্টিভেন মোফাত, এডগার রাইট এবং জো করনিশের মস্তিষ্ক প্রসূত ব্যাপার-স্যাপার। তাছাড়া উভচর বিমানের মরুভূমিতে পতন দৃশ্যতে মদ্যপ ক্যাপ্টেনের অবস্থা দেখে যেমন দমকে দমকে হাসি পাবে, তেমনি উত্তেজনায় পেটের ভিতর খামচি দিয়ে ধরে রাখবে, এতটাই এর ক্রেডিট।
স্পিলবার্গ এর স্বভাবসুলভ শৈল্পিক ছাপ আছে এতে, কিন্তু প্রত্যাশাজনক নয়। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখলে আনিমেশনের দুইএকটা খুঁত চোখে পড়বে। তবে মুভির শুরুতেই হার্জেকে টিনটিনের পোট্রেট আঁকতে দেখা যায়, অর্থাৎ হার্জেও ছবির একটা রোলে আছেন, এই রকম দুর্দান্ত আইডিয়া স্পিলবার্গ এর মাথায়ই থাকতে পারে।
সব মিলিয়ে অনেক ভালো লেগেছে। আমি আর আমার কাজিন রাতের বেলা লাইট বন্ধ করে মুভিটি দেখে প্রচুর ইনজয় করেছি। আমার রেটিং ৯.৫ ।
প্রিয় টিনটিন। বেঁচে থাক ভক্তদের মাঝে। আর আমাদের উপহার দিকে থাক এরকমই মজার মুভি এবং কমিক্স।
আপনারা যদি মুভিটি না দেখে থাকেন তাহলে দেখে আসেন। এইটুকু বলব যে আপনার সময় বিফলে যাবে না। আশা করি আপনারা অনেক মজা পাবেন। মুভিটি পিসিতে না থাকলে নিচের লিঙ্কগুলো থেকে ডাউনলোড করে নিন। তার আগে মুভির কিছু স্ক্রিনশটস দেখে নিন ——>>>
র্যাপিডশেয়ার ডাউনলোড লিঙ্ক (হিন্দি ডাবিং) :
টরেন্ট ডাউনলোড লিঙ্ক:
Post a Comment